ঢাকা,মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় মাটি লুটের তাণ্ডব থামাতে অভিযানে প্রশাসন: ডাম্পার ট্রাক জব্দ

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::  কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন জনপদে বেশ কয়েকমাস ধরে প্রতিযোগিতামুলক ভাবে চলছে পাহাড়-টিলা ও কৃষিজমি কেটে মাটি লুটের মহোৎসব। পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা জেলা প্রশাসনের কোনধরণের ছাড়পত্র না থাকলেও জড়িত প্রভাবশালী মহল অনেকটা দাপটের সাথে মাটি লুটের বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। এ অবস্থার কারণে একদিনে উজাড় হচ্ছে সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মুল্যবান বৃক্ষরাজি। অন্যদিকে কৃষিজমি কেটে মাটি লুটের কারণে কমে যাচ্ছে আবাদি জমির পরিমাণ। এতে খাদ্য উদ্বৃত্ত এই উপজেলায় ফসলি জমি কমতে থাকায় আগামীতে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন যেমন হুমকির মুখে পড়েছে, তেমনি পাহাড়-টিলা কেটে মাটি লুটের ফলে চরম পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে উপজেলাবাসি।

আশার কথা হলো, উপজেলাজুড়ে চলতে থাকা পরিবেশ বিধ্বংসী এসব অপকর্ম তথা মাটি লুটের তাণ্ডব থামাতে এবার শুদ্ধি অভিযানে নামলেন চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন। বুধবার ৯ ডিসেম্বর অভিযানের অংশহিসেবে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নে অভিযান পরিচালনা করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সৈয়দ সামসুল তাবরীজ। এসময় তিনি ঘটনাস্থল থেকে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন ও পরিবহনের অভিযোগে একটি নাম্বার বিহীন ডাম্পার ট্রাক জব্দ করেছেন।

অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ সামসুল তাবরীজ। তিনি বলেন, পাহাড় কাটা, কৃষিজমি কেটে মাটি লুট ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন সবসময় কাজ করছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা জেলা প্রশাসনের কোনধরণের অনুমতি না থাকলেও কতিপয় মহল দীর্ঘদিন ধরে উপজেলাজুড়ে এইধরণের অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন।

তিনি বলেন, পরিবেশ বিধ্বংসী এসব অপর্কমের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযানের অংশহিসেবে বুধবার উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসময় চলাচলের রাস্তা কেটে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন ও পরিবহনে জড়িত থাকার অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকে একটি নাম্বার বিহীন ডাম্পার ট্রাক আটক করা হয়েছে। তবে অভিযান টের পেয়ে জড়িতরা পালিয়ে যায়।

স্থানীয় সুত্রে অভিযোগ উঠেছে, পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা জেলা প্রশাসনের কোনধরণের ছাড়পত্র ছাড়াই উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের পাশে বগাচতর এলাকায় প্রভাবশালী চক্র মালিকদের কাছ থেকে কিছু জমি ইজারা নিয়ে মইনুল হক ও রেজাউল করিমের নেতৃত্বে একটি চক্র শক্তিশালী স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে লুটে নিচ্ছে। তাতে আবাদি জমি শ্রেণী পরিবর্তনের কারণে পুকুরে পরিণত হচ্ছে। এই অবস্থায় মাটি লুটের আশপাশের অন্তত দুইশ একর চাষের জমি ভেঙ্গে ছড়াখালে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে চাষের জমি রক্ষা করতে চরম হিমশিম খাচ্ছেন ভুক্তভোগী জমি মালিক ও চাষীরা। এ অবস্থার কারণে ওই এলাকায় যেসব চাষের জমি এখনো রক্ষিত আছে, তার বেশিরভাগই ভয়াবহ ভাঙ্গনের তাণ্ডবে পড়েছে।

জানা গেছে, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক সংলগ্ন এলাকায় বনবিভাগের পাহাড় টিলা কেটে এবং পাশের বগাচতর এলাকায় চাষের জমি কেটে মাটি লুটের ঘটনার সত্যতাও পেয়েছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ সামসুল তাবরীজ। সর্বশেষ গত ২৯ নভেম্বর ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে পাহাড় কেটে লুটের স্থান থেকে অবৈধভাবে মাটি সরবরাহকালে দুইটি নাম্বার প্লেটবিহীন ডাম্পার গাড়িও (মিনি ট্রাক) জব্দ করেন তিনি।

ওই সময় অবৈধভাবে মাটি সরবরাহ কাজে ব্যবহৃত নাম্বার প্লেট বিহীন দুইটি ডাম্পার গাড়ি (মিনি ট্রাক) জব্দ করা হয়। পরে জব্দকৃত দুইটি গাড়িকে একলাখ টাকা জরিমানা করা হয়। #

 

পাঠকের মতামত: